
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতারণার অস্ত্র হয়ে উঠছে ‘স্টারলিংক’, উদ্বেগ বাংলাদেশেও এটি বণিক বার্তার শিরোনাম। খবরে বলা হচ্ছে,ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’ এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতারণা চক্রের নতুন অস্ত্র হয়ে উঠছে। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন ও পূর্ব তিমুরে এ স্যাটেলাইট সংযোগ ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে ‘স্ক্যাম সিটি’।
সোমবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিনেটর হাসান সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করে ইলন মাস্কের প্রতি অপরাধীদের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সক্রিয় একাধিক আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র ‘স্ক্যাম কম্পাউন্ড’ পরিচালনার মাধ্যমে আমেরিকানদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এই কাজের সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্যরা ইলন মাস্কের স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমস এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক বলেছে, এসব চক্র প্রতারণার মাধ্যমে আমেরিকানদের কাছ থেকে বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে।
চিঠিতে মার্কিন ওই সিনেটর বলেছেন, ‘‘স্পেসএক্সের পরিষেবা নিয়ম অনুযায়ী, প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং লাওসে এসব স্ক্যাম নেটওয়ার্ক অব্যাহতভাবে স্টারলিংকের ব্যবহার করছে।’’
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স সিনেটর ম্যাগি হাসানের লেখা চিঠির একটি কপি হাতে পেয়েছে। চিঠিতে ইলন মাস্ককে উদ্দেশ করে ম্যাগি হাসান লিখেছেন, ‘‘আমেরিকানদের নিশানা করে স্টারলিংক ব্যবহারের সুযোগ নেওয়া অপরাধীদের ঠেকানোর বিষয়ে স্পেসএক্সের দায়িত্ব রয়েছে।’’
তবে এই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে স্পেসএক্স সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে বিশেষ করে থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় স্ক্যাম কম্পাউন্ড গড়ে তুলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অপরাধী চক্র বিশ্বজুড়ে প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত কয়েক বছরে এই চক্রের সদস্যরা লাখ লাখ মানুষকে বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। পাচারের শিকার লোকজনকে দিয়ে জোর করে অনলাইনে অবৈধ প্রতারণামূলক কাজ করানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সিনেটর হাসান লিখেছেন, ‘‘বেশিরভাগ মানুষ হয়তো ক্রমবর্ধমান স্ক্যাম মেসেজ, ফোনকল অথবা ই-মেইল পাচ্ছেন। কিন্তু বিশ্বের অন্য প্রান্তে অবস্থানকারী আন্তর্জাতিক অপরাধীরা যে এসব প্রতারণার কাজে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, তা হয়তো তারা জানেন না।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে থাইল্যান্ড সীমান্ত লাগোয়া নিজেদের পাঁচটি এলাকায় বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে মিয়ানমার। এসব স্ক্যাম সেন্টারের কার্যক্রম ঠেকানোর লক্ষ্যে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক এই অপরাধী চক্র বর্তমানে বড় ধরনের আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
যেগুলো রোমান্স স্ক্যাম (ভুয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে টাকা হাতানো), বিনিয়োগ প্রতারণা বা পিগ-বাচারিং, অবৈধ অনলাইন জুয়া ও ক্রিপ্টো জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং, মানব পাচার ও জোরপূর্বক শ্রম, মাদক পাচার, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, অবৈধ ব্যাংকিংয়ের মতো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তির এ অপব্যবহার এখন বাংলাদেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তরের (ইউএনওডিসি) গত বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ স্ক্যাম নেটওয়ার্কগুলো ১৮ থেকে ৩৭ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে।
সংস্থাটি গত ১২ সেপ্টেম্বর এক সতর্কবার্তায় জানায়, বাড়তি মিডিয়া নজরদারি ও আইন প্রয়োগের চাপে প্রতারক চক্রগুলো ঘাঁটি গাড়ছে পূর্ব তিমুরসহ অন্যান্য দেশে।
বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা বা অনলাইন প্রতারণার শঙ্কা প্রকাশ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সতর্কতা হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়ানো ও স্টারলিংকের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
দেশপক্ষ/ এমএইচ