বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন বয়কট করবেন আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা। বুধবার এমনই জানালেন দলের নেত্রী তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন হাসিনা। জানান যে, আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় শামিল হবেন না।
বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়েও মুখ খুলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। জানিয়েছেন, যে দলের নেতৃত্বেই বাংলাদেশে সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক, সেই সরকার আওয়ামী লীগকে স্বীকৃতি না-দিলে তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন না। রয়টার্স জানিয়েছে, আপাতত ভারতেই থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারের নির্বাচনী বৈধতা থাকা উচিত। লক্ষ লক্ষ মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে তাঁরা ভোট দেবেন না। আপনি একটি কার্যকরী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় লক্ষ লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার কাড়তে পারেন না।” হাসিনা জানিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থকদের অন্য দলকে সমর্থন করতে বলবেন না। তবে আওয়ামী লীগ নেত্রীর আশা, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে। উল্লেখ্য যে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা।

একই দিন (বুধবার) যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট এবং আন্তর্জাতিক বার্তা এএফপি তেও শেখ হাসিনার পৃথক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে।
নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা রয়টার্সের ইমেইলে পাঠানো প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধু অন্যায্যই নয়, বরং আত্মঘাতী,।
বাংলাদেশে ১২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ভোটার আছে। এর বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগের সমর্থক। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দীর্ঘকাল ধরে দেশটির রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। সনির্বাচন কমিশন গত মে মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। এর আগে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে।
“আমরা আওয়ামী লীগের ভোটারদের অন্য দলকে সমর্থন করতে বলছি না। আমরা এখনো আশা করি শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আমরা নিজেরাই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবো,” বলেছেন শেখ হাসিনা।
তবে তিনি বা তার পক্ষে কেউ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেয়ার সুযোগের জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সাথে নেপথ্যে আলোচনা করছেন কি-না সে বিষয়ে শেখ হাসিনা কিছু বলেননি।
গত বছর নিহত বিক্ষোভকারীদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা দ্য ইনডিপেন্ডেন্টকে বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা প্রতিটি সন্তান, ভাইবোন, আত্মীয় ও বন্ধুকে হারিয়েছি, তাদের প্রত্যেকের জন্য আমি শোকাহত’ এবং ‘আমার সমবেদনা জানানো অব্যাহত রাখব’।
তবে তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি গত বছরের বিক্ষোভের সময় তার কর্মকাণ্ডকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘আমি কোনো ব্যক্তিগত দায় স্বীকার করছি না।’
ব্যাপক প্রাণহানির জন্য তিনি ‘মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর শৃঙ্খলা ভেঙে পড়া’কে দায়ী করে বলেন, ‘একজন নেতা হিসেবে আমি চূড়ান্তভাবে নেতৃত্বের দায় নিচ্ছি, কিন্তু আমি নিরাপত্তা বাহিনীকে ভিড়ের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম বা চেয়েছিলাম, এই দাবিটি পুরোপুরি ভুল।’

শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ দেশের ভবিষ্যৎ ভূমিকা পালনে ফিরে আসবে, সেটা সরকারে হোক আর বিরোধী দলে হোক এবং তার পরিবারের এর নেতৃত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই।
তার ছেলে ও উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় গত বছর রয়টার্সকে বলেছিলেন যে দল চাইলে তিনি নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।
“এটা আসলে আমার বা আমার পরিবারের ব্যাপার না। বাংলাদেশের জন্য আমরা সবাই যা চাই, সেখানে সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরতে হবে। কোন ব্যক্তি বা পরিবার আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না”।
দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি দেশে ফিরতে চাই, তবে শর্ত একটাই—সেখানে বৈধ সরকার থাকতে হবে, সংবিধান অটুট থাকতে হবে এবং প্রকৃত আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’
বাংলাদেশে গত বছর অগস্টে হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠতে শুরু করেছিল সে দেশের অন্দরে। আওয়ামী লীগের ছাত্রশাখা বাংলাদেশ ছাত্র লীগকে আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করেছে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তদন্ত চলছে এবং দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি রয়েছে, এই যুক্তি দেখিয়ে হাসিনার দলকে নিষিদ্ধ করে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। মে মাসেই অবশ্য আওয়ামী লীগের স্বীকৃতি বাতিল করেছিল বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন।