
গত এক বছরে দেশের ২৫৮টি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার অভিযোগ তুলে অন্তর্বর্তী সরকারকে পরোক্ষভাবে দায়ী করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। এই অভিযোগের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, নন-কমপ্লায়েন্ট বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কারখানার দরকার নেই।
শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে শফিকুল আলম লিখেছেন, “নন-কমপ্লায়েন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের জন্য খারাপ কিছু নয়। আমাদের অনিরাপদ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কারখানার দরকার নেই। বড় কারখানা মানেই সাধারণত উন্নত কমপ্লায়েন্স।”
গত মঙ্গলবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জানান, গত এক বছরে ২৫৮টি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এর ফলে লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন এবং রপ্তানি আয়ও কমে যাচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর নিয়ম-কানুন ও পরিবেশগত মানদণ্ডের চাপে এসব কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাঁর দাবি, “সরকারের অসহযোগিতা ও অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বিনিয়োগের আগ্রহ কমাচ্ছে, যার ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো অভিযোগ করেছে, পোশাক কারখানা বন্ধের এই ধারা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়—এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তাদের মতে, ইচ্ছাকৃতভাবে বেকারত্ব বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দুর্বল করা হচ্ছে, যাতে পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তা ও অনুদান সহজে পাওয়া যায়।
সূত্রদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত হচ্ছে, আর কিছু বিশেষ গোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম বাড়িয়ে নির্দিষ্ট মহল অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে, যার মাধ্যমে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল উপকৃত হচ্ছেন।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ফলে এই খাতের ২৫৮টি কারখানা বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৫ লক্ষ শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিজিএমইএ সভাপতি সতর্ক করে বলেছেন, “এই বন্ধের ফলে রপ্তানি আয়ে ১০–১৫% পর্যন্ত ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সরকারকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বক্তব্যে পরিষ্কার যে সরকার অননুমোদিত, অনিরাপদ বা পরিবেশবিরোধী কারখানাগুলোকে কোনোভাবেই সমর্থন করবে না।
তিনি বলেন, “দেশের উন্নয়ন টেকসই হতে হলে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের বিকল্প নেই। ক্ষতিকর কারখানা বন্ধ হওয়া দেশ ও শ্রমিক—দু’পক্ষেরই দীর্ঘমেয়াদে উপকারে আসবে।”
দেশপক্ষ/ এমএইচ