
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের পদযাত্রায় অংশ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন।
রোববার (১৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুরের অলক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। শিক্ষিকা ফাতেমার মৃত্যুতে শিক্ষক সমাজে গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
যে কারণে অসুস্থ হলেন শিক্ষিকা ফাতেমা
নিহত শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার চাঁদপুরের উত্তর মতলবের ৫ নম্বর ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি দুই সন্তানের জননী।
শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেছেন, গত ৮ নভেম্বর রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার। আন্দোলন চলাকালীন শাহবাগে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড বা বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তীব্র আতঙ্ক ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, “৮ নভেম্বর আন্দোলনস্থলে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের পর ফাতেমা গুরুতর অসুস্থ হন। একজন শিক্ষক ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে এসে নিজের জীবন দিয়ে দিলেন। দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ মঞ্চের পক্ষ থেকে আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।”
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর থেমে গেল নিঃশ্বাস
সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই ফাতেমা আক্তার মিরপুরের অলক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তাঁর স্বামী ডিএম সোলায়মান গভীর শোক নিয়ে জানান, “আমাদের দুই বাচ্চা এখনো বুঝতেই পারছে না কেন তাদের মা ফিরছে না। ওর স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা আর সন্তানদের নিয়ে শান্ত একটা জীবন… সেই স্বপ্ন কীভাবে ভেঙে গেল হঠাৎ!”
শিক্ষক সমাজে শোকের ছায়া
শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তারের এই করুণ মৃত্যুতে সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ মর্মাহত। শিক্ষক নেতারা এই ঘটনাকে ‘বেদনাদায়ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার ইডেন মহিলা কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তাঁকে আজ সন্ধ্যায় (সম্ভাব্য স্থান ও সময়) নিজ গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা মন্তব্য প্রদান করা হয়নি।
বর্তমানে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কেবলমাত্র শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ এবং তাদের গভীর শোক ও বিচার চাওয়ার বিষয়টিই প্রধানত উঠে আসছে।
দেশপক্ষ/ এমএইচ