৫ই আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপ। গত ১৪ মাসে সারা দেশে পুলিশের ওপর ১৯৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ সদস্যরা মবের শিকার হয়েছেন। এসব হামলার ধরন ও বিস্তার উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪ মাসে এসব হামলা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হামলার সংখ্যা ছিল ৩১টি, যা আগস্টে বেড়ে দাঁড়ায় ৫১টিতে—এক মাসেই দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি। এসব হামলার পেছনে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে। ৪৪টি ঘটনায় ৩৯ জন আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক কর্মীদের মাধ্যমে।
সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, পুলিশের নিয়মিত অভিযানের সময়ই তারা হামলার মুখে পড়ছে। যেমন—নরসিংদীতে চাঁদাবাজি ঠেকাতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহত হন, সিলেটে শাহপরান থানার ওসিসহ পাঁচ জন আহত হন, ফেনীতে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতারে গিয়ে পুলিশের কাছ থেকে ওয়াকিটকি ও শটগান ছিনিয়ে নেওয়া হয়, চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবৈধ অটোরিকশা আটক করতে গিয়ে ৫০-৬০ জনের হামলায় ট্রাফিক কনস্টেবল আহত হন, হবিগঞ্জে চোরাই মোবাইল উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের ছয় সদস্য আহত হন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়হীনতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, এই সমন্বয়হীনতা অপরাধীদের সাহসী করে তুলছে, কারণ তারা বুঝতে পারছে পুলিশের ওপর হামলা করলে তেমন প্রতিক্রিয়া হবে না।
পুলিশের অপারেশন কৌশলেও পরিবর্তন এসেছে। আগের ‘আক্রমণাত্মক’ পুলিশিংয়ের বদলে এখন ‘আত্মসমর্পণমূলক’ পুলিশিং চলছে, যা কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে মাদক, দখল, ছিনতাই রোধে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ উল্টো হামলার শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে পুলিশের মনোবল দুর্বল করতে ইউনিফর্মধারী সদস্যদের পেশাগত কাজে বাধা দিচ্ছে ও লাঞ্ছিত করছে। তারা এসব বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
দেশপক্ষ/ এমএইচ









