বান্ধবীর ফেসবুকে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। এ সময় তথ্য সংগ্রহকালে এক সাংবাদিকের প্রেস কার্ড ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় সাংবাদিককে গালিগালাজ করে।
রোববার (১২ অক্টোবর) রাত ৮টার থেকে ১১টা পর্যন্ত পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছুদিন যাবত এক নারী বন্ধুকে নিয়ে পীরগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব জীবন হামিদ ও ছাত্রদল কর্মী শ্রাবণ-শুভ গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ওই বান্ধবীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) পোস্ট ও কমেন্ট করায় আজ (রোববার) রাতে তারা দুই পক্ষ মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে উভয়পক্ষ লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়। দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দোকানপাট বন্ধ করে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কালবেলার উপজেলা প্রতিনিধি মো. বাদল হোসেনকে লাঞ্ছিত করেন এবং তার মোবাইল ফোন ও প্রেসকার্ড ছিনিয়ে নেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন ধরেই এক মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, এমনকি কমেন্ট পর্যন্তও চলে। একপর্যায়ে আজ উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনার ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা। তারা অবিলম্বে লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় লাঞ্ছিত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পালনকালে লাঞ্ছিত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিষেয় উপজেলার ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েস সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি এখনও বিস্তারিত জানতে পারিনি। এটা নিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকে ক্ষমা করা হবে না। অবশ্যই সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম খান বলেন, মেয়ে বান্ধবীর ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় আটজনের মতো আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এলাকা শান্ত রয়েছে, তবে পুনরায় অঘটন এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলেই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সংঘর্ষে লিপ্তে ব্যক্তিরা কোনো রাজনৈতিক দলের কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নন। দেখে মনে হবে তারা স্কুলের ছাত্র। স্থানীয় বিএনপির নেতারা ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তারাও তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। আর যে মেয়েকে নিয়ে সংঘর্ষ, তার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। এমনকি যারা আহত হয়েছেন তাদেরও পরিচয় পাওয়া যায়নি।
দেশপক্ষ/ এমএইচ









