ঢাকা, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১:২১ পূর্বাহ্ন

আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে ভোট হবে ভাওতাবাজি: জয়

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে তা হবে এক ধরনের ভাওতাবাজি। সেই নির্বাচন হবে অর্থহীন এবং তাতে দেশে অস্থিরতা চলতেই থাকবে। ‌অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে জয়ের পরামর্শ যত দ্রুত সম্ভব আওয়ামী লিগের কার্যকলাপের ওপর জারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। জয়ের বক্তব্য, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে দেওয়া হচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে অনুমতি দিলে সেই নির্বাচন হবে প্রহসনের ভোট।

single-ad-main-1

সম্পতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে জয় এ সব কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি বলেছেন, এই দলকে বাদ দিয়ে কোনও নির্বাচন হলে তা ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছুই হবে না। সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়, তবে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীলই থাকবে। তাঁর কথায়, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বাধীন ও সুষ্ঠু করতে হবে।’

জয় বলেন, বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে, তা আসলে আমার মা ও আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। এটা হচ্ছে ন্যায়বিচারের ছদ্মবেশে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো।’ বাংলাদেশে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর সেটাই হবে প্রথম সংসদ নির্বাচন।

single-ad-main-2

এদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসহ ছয়টি মানবাধিকার সংস্থা গত সপ্তাহে ইউনুসের সরকারকে চিঠি লিখে আওয়ামী লিগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানায়। তারা বলে, এই নিষেধাজ্ঞা সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুতরভাবে সীমিত করছে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আওয়ামী লিগ সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। জয়, যদি আওয়ামী লিগকে নির্বাচনের প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় না দেওয়া হয়, তবে নির্বাচনকে দেশের জনগণ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা স্বীকৃতি দেবেন না।তিনি বলেন, আমাদের কোনও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই শেষ মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও নির্বাচনটি হবে প্রহসন।

জয় বাংলাদেশ উগ্র ইসলামপন্থীদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি আসন্ন নির্বাচনের প্রধান প্রতিপক্ষ। আর এক প্রধান দল জাতীয় পার্টি খোলাখুলি রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না।‌ তাদের কার্যালয় আক্রমণ ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আরও বিভক্ত হয়েছে, কারণ দেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামি প্রায় এক দশক পর রাজনীতিতে ফিরে এসেছে। হাসিনা সরকারের আমলে দলটি নিষিদ্ধ ছিল। গত এক বছরে তারা দ্রুত প্রভাব বাড়িয়েছে এবং অন্যান্য কঠোর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছে। জয় বলেন, বাংলাদেশ অস্থিতিশীল থাকলে ইসলামপন্থীরাই লাভবান হবে। তিনি ইউনুসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তিনি উগ্র ইসলামপন্থীদের সমর্থন করছেন এবং তাদের ক্ষমতায় আনার জন্য পূর্বনির্ধারিত নির্বাচনের পরিকল্পনা করছেন।

জয় স্বীকার করেন যে হাসিনা প্রাথমিক কিছু ভুল ছিল। ‌তবে তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার হরণ বিষয়ক প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করেন, যেখানে বলা হয়েছে যে অভ্যুত্থানে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছিল। তিনি ইউনুস সরকারের এক স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ৮০০ জন।জয় বলেন, সব মৃত্যু ‘দুঃখজনক’ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন কেন ইউনুস সরকার গত বছরের সহিংসতায় জড়িত বিক্ষোভকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ইউনুস সরকার তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করেছে।

জয় অভিযোগ করেন, ইউনুস সরকার মানবাধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগের কয়েক লক্ষ সমর্থক এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে। জামিন পাচ্ছেন না এবং তাদের অনেককে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর দাবি, অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রায় ৫০০ আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন, বেশিরভাগই জনতার হাতে এবং ৩১ জন হেফাজতে মারা গেছেন। জয় মন্তব্য করেন, ইউনুস সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড ভয়াবহ।‌ বলেন, বলেন, দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর হামলা বেড়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবশ্য প্রথম থেকেই থেকেই সংখ্যালঘুদের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।‌

দেশপক্ষ/ এমএইচ

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন