দেশের গণমাধ্যমগুলোতে এক মূর্তিমান আতঙ্কেও নাম শফিকুল আলম। যিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। নিজের বির্তকিত কর্মকাণ্ডের জন্য ডাস্টবিন শফিক এবং গণশত্রু হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজেও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন- মানুষ তাকে দেখলে গণশত্রু বলে ডাকা-ডাকি করে।

কোনো ধরণের আইনি ভিত্তি ছাড়া সংবিধান লঙ্ঘন করে মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ারপর প্রেস সচিবের দায়িত্ব পান শফিকুল আলম। এরপর হতেই দেশের গোটা গণমাধ্যমের কর্তৃক নেন শফিকুল ইসলাম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে একের পর এক শিরোনাম ঠিক করে দিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রচারের জন্য চাপ দেন। শফিকের কথা না শুনলেও মুহূর্তেও চাকরি হারিয়েছেন বহু সাংবাদিক।
দেশের প্রতিটি সংবাদপত্র, অনলাইন, টেলিভিশন, এমনকি ফেইসবুক পোস্টও শফিকের নেতৃত্বাধীন প্রেস উইংয়ের হাতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। গত ১৫ মাসে দেশে মব সন্ত্রাসের নামে মানুষ হত্যা, রাষ্ট্রীয় সম্পদে দখল ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে অসংখ্যা। এসব ঘটনাকে স্বীকৃতি দিয়ে বিৃবতি দিয়েছে প্রেস উইং।
মূলত- রাষ্ট্রের মুখপাত্রের পদটি শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি নৈতিকতারও প্রতীক। কিন্তু সেই মর্যাদাপূর্ণ আসন যখন ব্যক্তিগত লোভ, উগ্র চিন্তা ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, তখন সত্য হারিয়ে যায় ক্ষমতার গর্জনে। এমনই এক চিত্র ফুটে উঠছে বর্তমান প্রেস সচিব শফিকুল আলমের কার্যকলাপে যিনি রাষ্ট্রের তথ্য প্রবাহ নয়, বরং উগ্রতা ও দুর্নীতির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিকদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাদের জায়গায় বসানো হয় জামাত-শিবির ও বিএনপি ঘেঁষা ব্যক্তিদের। আয়না ঘরের কাল্পনিক কাহিনী প্রচার করতে শফিক নিয়মিত চাপ সৃস্টি করে আসছেন। বাস্তবে আয়নাঘরের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। শফিকের টেলিফোনের ভয়ে তটস্থ গণমাধ্যমের শীর্ষ কর্তারা। গত ১৫ মাসে শফিকের টেলিফোন পাননি এমন গণমাধ্যমে নেই বললেই চলে।
মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১৫ মাসে দেশের গণমাধ্যমে চলছে দখলদারিত্ব, চাকরিচ্যুতি আর হত্যা মামলায় আসামী করার হিড়িক। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ইশারায় বাইরে কোন গনমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করার সাধ্য নেই। জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে গড়া উঠা এনসিপি কয়েক নেতার বিরুদ্ধে কয়েকটি গণমাধ্যম দখল করেছেন, যার নেপথ্যে শফিক। দেশের সব গণমাধ্যমের শীর্ষ পদ দখলে নিয়েছে বিএনপি জামায়াতের অনুসারীরা। এই সময়ে চাকরি হারিয়েছেন অন্তত সহস্রাধিক সাংবাদিক। হত্যা মামলার আসামী হয়েছেন ৩ শতাধিক সাংবাদিক। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও দেশের সাংবাদিকদের নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে।

একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১৫ মাসে ১ হাজার সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েচে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাসী ৩০০ সাংবাদিকের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা হত্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। ঘটেছে একাধিক সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। অর্ধশত সাংবাদিককে কারাগার রয়েছে। বেশ কয়েক জন জামিন মেললেও বাকিরা এখনো কারাগারে। অন্তত ২১৯ জন সংবাদকর্মী পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন।
মব সৃষ্টি করে পত্রিকা-টিভি, অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম দখলের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে- জনকণ্ঠ, মাই টিভি, ডিবিসি, সময় টেলিভিশন, একুশে টিভি। কথিত মব ও গ্রেফতার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অন্তত ২ সহস্রাধিক সাংবাদিক। প্রাণভয়ে দেশ ছেড়েছেন অন্তত শতাধিক সাংবাদিক।
জুলাই আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই জাতীয় প্রেসক্লাব দখলে নেয় বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিকরা। কোনো ধরণের নির্বাচন ছাড়াই অগণতান্ত্রিকভাবে প্রেসক্লাব পরিচালনা করা হচ্ছে। জাতীয় প্রেস ক্লাব কমিটির পদ অবৈধভাবে দখল করে অগঠনতান্ত্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ১০০ সাংবাদিকের সদস্যপদ স্থগিত/বহিষ্কার করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধেও চেতনাধারী ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের অফিসের টাকাসহ মালামাল লুট করে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। ২ শতাধিক পেশাদার সাংবাদিকের এ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। অর্ধশত সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্ধ করা হয়েছে।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। শফিকুল আলম শুধু তথ্য নয়, অর্থের প্রবাহও নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। গত বছর নিজের সম্পদের একটি ফিরিস্থি ফেইসবুকে শেয়ার কওে শফিক। বর্তমানে যা ১০ গুন ছাড়িয়ে গেছে। ইতোমধ্যে লন্ডনে তার পরিবারের সদস্য সেকেন্ড হোম গড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বিপুল অর্থ। পদ্মাসেতুর টোল আদায় থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্প সবখানেই রয়েছে তার গোপন ভাগবাটোয়ারা। জানা গেছে, প্রতিদিন টোল আদায় কেন্দ্র থেকে কোটি টাকারও বেশি নগদ অর্থ ভাগ নেওয়া হয় তার নির্দেশে। ঘনিষ্ঠ মহলের তদবীর, চাঁদাবাজি ও কমিশনের মাধ্যমে তিনি গড়ে তুলেছেন প্রায় এক হাজার কোটি টাকার এক গোপন সাম্রাজ্য।
প্রেস সচিব শফিকের পাহাড়সম সম্পদ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে দাবি করছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই অভিযোগগুলো তদন্ত করতে হবে। শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে উঠা লুটপাট ও হত্যার অভিযোগগুলো যদি সত্য হয়, তাহলে এটি সরকারের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের আঘাত।
অবৈধ সকল সুবিধা ফেরত দিতে হবে এমন সময়ের জন্য শফিককে প্রস্তুত থাকতে বলছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিকরা।
অতি সম্প্রতি আইন লঙ্ঘন করে নিজের ভাইকে নারায়ণগঞ্জে রাষ্ট্রীয় পদে নিয়োগ দিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি।









